OPERATING SYSTEM (CHAPTER 1)/ অপারেটিং সিস্টেম ধারনা

 

অপারেটিং সিস্টেমের পরিচিতি

 

অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) হল একটি সফটওয়্যার প্রোগ্রাম, যা কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এবং ব্যবহারকারীর মধ্যে একটি মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করে। এটি কম্পিউটারের সমস্ত হার্ডওয়্যার সম্পদ (যেমন CPU, মেমরি, ডিস্ক, ইত্যাদি) নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্যবহারকারীর প্রোগ্রামগুলিকে কার্যকরী করে। অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া একটি কম্পিউটার কার্যকরী হতে পারে না।

অপারেটিং সিস্টেমের মূল কাজগুলি:

1.   প্রসেস ম্যানেজমেন্ট (Process Management):

o    কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রাম একসাথে চালানোর জন্য প্রসেস তৈরি, পরিচালনা এবং সমাপ্ত করা হয়। অপারেটিং সিস্টেম এই প্রসেসগুলির সময়সূচি নির্ধারণ করে এবং একাধিক প্রসেসের মধ্যে সুষ্ঠু সময় বণ্টন করে।

2.   মেমরি ম্যানেজমেন্ট (Memory Management):

o    কম্পিউটারের মেমরির সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য অপারেটিং সিস্টেম দায়ী। এটি প্রোগ্রাম এবং ডেটা লোড করতে মেমরি অ্যাসাইন করে এবং অব্যবহৃত মেমরি মুক্ত করে।

3.   ফাইল ম্যানেজমেন্ট (File Management):

o    ফাইল সংরক্ষণ, নামকরণ, অ্যাক্সেস এবং পরিচালনা করার দায়িত্ব অপারেটিং সিস্টেমের। এটি ফাইল সিস্টেমের মাধ্যমে ডেটার নিরাপত্তা এবং সহজ অ্যাক্সেস নিশ্চিত করে।

4.   ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট (Device Management):

o    কম্পিউটারের সাথে যুক্ত বিভিন্ন ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস (যেমন কী-বোর্ড, মাউস, প্রিন্টার ইত্যাদি) এর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনা করার কাজ করে অপারেটিং সিস্টেম।

5.   ইন্টারফেস প্রদান (User Interface):

o    অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য একটি ইন্টারফেস প্রদান করে। এই ইন্টারফেস দুটি ধরণের হতে পারে:

§  গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI): এখানে আইকন, উইন্ডো এবং মাউস ব্যবহার করে কম্পিউটার পরিচালনা করা যায়।

§  কমান্ড লাইন ইন্টারফেস (CLI): এখানে ব্যবহারকারী বিভিন্ন কমান্ড দিয়ে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করে।

অপারেটিং সিস্টেমের প্রকারভেদ:

1.   সিঙ্গেল ইউজার অপারেটিং সিস্টেম:

o    এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে একসময়ে শুধুমাত্র একজন ব্যবহারকারী কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, MS-DOS

2.   মাল্টি-ইউজার অপারেটিং সিস্টেম:

o    এই অপারেটিং সিস্টেমে একাধিক ব্যবহারকারী একসাথে কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, UNIX, Linux

3.   রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম (RTOS):

o    এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম বাস্তব সময়ে কাজ করে, যেখানে কাজটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, বিমান চালনা নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম।

4.   মাল্টি-টাস্কিং অপারেটিং সিস্টেম:

o    এই সিস্টেমে একসঙ্গে একাধিক কাজ বা প্রোগ্রাম চালানো যায়। উদাহরণস্বরূপ, Windows, MacOS

জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেমের উদাহরণ:

  • Windows: Microsoft-এর দ্বারা তৈরি করা একটি জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম, যা GUI ভিত্তিক।
  • Linux: এটি একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম, যা বহুল প্রচলিত।
  • MacOS: Apple-এর দ্বারা তৈরি করা একটি বিশেষ অপারেটিং সিস্টেম, যা Mac কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয়।

অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের কার্যকরীতা ও ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্যবহারকারীর এবং কম্পিউটারের মধ্যে একটি মেলবন্ধন তৈরি করে, যা কম্পিউটারকে দক্ষভাবে ব্যবহার করতে সহায়তা করে।

 

অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) কী? অপারেটিং সিস্টেম (OS) হল একটি সফটওয়্যার যা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং ব্যবহারকারীর মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। এটি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এবং কম্পিউটার সিস্টেমকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার সুযোগ প্রদান করে। অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীর কমান্ড অনুযায়ী হার্ডওয়্যারকে পরিচালনা করে এবং বিভিন্ন প্রোগ্রাম চলানোর জন্য একটি পরিবেশ সরবরাহ করে।

অপারেটিং সিস্টেমের উদ্দেশ্য:

1.   ব্যবহারকারী এবং হার্ডওয়্যার সংযোগ স্থাপন: অপারেটিং সিস্টেমের প্রধান কাজ হল ব্যবহারকারী এবং কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা। ব্যবহারকারী অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে কম্পিউটারের বিভিন্ন হার্ডওয়্যার উপাদান যেমন সিপিইউ, মেমরি, ডিস্ক ড্রাইভ ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারে।

2.   সম্পদ পরিচালনা (Resource Management): অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের বিভিন্ন সম্পদ যেমন মেমরি, প্রসেসর, ইনপুট/আউটপুট ডিভাইস ইত্যাদি পরিচালনা করে। এটি নিশ্চিত করে যে বিভিন্ন প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশন একে অপরের সাথে সংঘর্ষ ছাড়াই এই সম্পদগুলি ব্যবহার করতে পারে।

3.   মাল্টিটাস্কিং (Multitasking): অপারেটিং সিস্টেম একই সময়ে একাধিক প্রোগ্রাম চালানোর সুযোগ দেয়। এটি প্রসেসরকে বিভিন্ন প্রোগ্রামের মধ্যে সময় ভাগ করে কাজ করতে সক্ষম করে, যা মাল্টিটাস্কিং নামে পরিচিত।

4.   ফাইল সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট (File System Management): অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের স্টোরেজ ডিভাইসে ফাইল এবং ডিরেক্টরি পরিচালনা করে। এটি ফাইল তৈরি, সংরক্ষণ, মুছে ফেলা এবং খোঁজার কাজ সহজ করে তোলে।

5.   সিকিউরিটি এবং এক্সেস কন্ট্রোল (Security and Access Control): অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীর তথ্য এবং ডেটা নিরাপদ রাখার জন্য বিভিন্ন সিকিউরিটি ব্যবস্থা প্রদান করে। এটি ব্যবহারকারীর অনুমতি অনুযায়ী সিস্টেমের বিভিন্ন অংশে অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ করে।

6.   ইন্টারফেস প্রদান (Providing Interface): অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীকে একটি ইন্টারফেস প্রদান করে যার মাধ্যমে তারা কম্পিউটারকে নির্দেশনা দিতে পারে। এটি হতে পারে গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) বা কমান্ড লাইন ইন্টারফেস (CLI)

উদাহরণ: বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে Windows, macOS, Linux, Android, iOS ইত্যাদি। এগুলি বিভিন্ন ডিভাইসের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে এবং ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন কাজ করতে সহায়তা করে।

অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া কম্পিউটার কার্যকরভাবে কাজ করতে অক্ষম হবে, কারণ এটি ব্যবহারকারী এবং হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার উপাদানের মধ্যে মেলবন্ধন স্থাপন করতে পারে না।

অপারেটিং সিস্টেমের ধরণসমূহ: ব্যাচ, টাইম-শেয়ারিং, ডিস্ট্রিবিউটেড, রিয়েল-টাইম, এবং এমবেডেড সিস্টেম

১. ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেম (Batch Operating System):

ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেম হলো এক ধরনের প্রাথমিক অপারেটিং সিস্টেম যেখানে কাজগুলো একত্রিত করে ব্যাচ আকারে প্রসেস করা হয়। এটি সাধারণত প্রাচীন মেইনফ্রেম কম্পিউটারগুলিতে ব্যবহৃত হত। এখানে একই ধরনের কাজ একসাথে সংযুক্ত করা হয় এবং অপারেটর সেগুলিকে সিরিয়ালভাবে চালায়।

বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  • কাজগুলো একাধিক ব্যাচে বিভক্ত হয়।
  • ব্যবহারকারী সরাসরি কাজটি চালায় না, বরং অপারেটর কাজগুলোকে ব্যাচ হিসেবে সাজিয়ে প্রসেস করে।
  • প্রসেসিং ধীরগতির, কারণ এক কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কাজ শুরু করা যায় না।

২. টাইম-শেয়ারিং অপারেটিং সিস্টেম (Time-sharing Operating System):

টাইম-শেয়ারিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের একাধিক কাজ একসঙ্গে পরিচালনা করার সুযোগ দেয়। কম্পিউটার সিপিইউ এক সময়ে একাধিক কাজ করতে পারে না, কিন্তু টাইম-শেয়ারিং সিস্টেমে প্রতিটি কাজকে কিছু সময়ের জন্য করে তারপর অন্য কাজের দিকে চলে যায়, ফলে ব্যবহারকারী মনে করে যেন সব কাজ একসঙ্গে চলছে।

বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  • মাল্টি-টাস্কিং এর সুবিধা।
  • ব্যবহারকারীদের সাথে সরাসরি ইন্টারঅ্যাকশন করা যায়।
  • সিপিইউর সময় ভাগ করে একাধিক ব্যবহারকারী বা প্রোগ্রামের জন্য বরাদ্দ করা হয়।

৩. ডিস্ট্রিবিউটেড অপারেটিং সিস্টেম (Distributed Operating System):

ডিস্ট্রিবিউটেড অপারেটিং সিস্টেম হলো এমন একটি সিস্টেম যেখানে একাধিক কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত থাকে এবং কাজগুলো একসঙ্গে ভাগাভাগি করে প্রসেস করা হয়। এতে বিভিন্ন কম্পিউটার একসঙ্গে কাজ করতে পারে এবং ব্যবহারকারী মনে করে যেন একটিমাত্র কম্পিউটারে কাজ করা হচ্ছে।

বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  • একাধিক মেশিনে কাজ ভাগ করে প্রসেসিং করা হয়।
  • রিসোর্সগুলি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শেয়ার করা হয়।
  • উচ্চ কার্যকারিতা এবং রিসোর্সের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়।

৪. রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম (Real-time Operating System):

রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম এমন একটি সিস্টেম যেখানে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা জরুরি। এই সিস্টেমগুলি সাধারণত সেইসব পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হয় যেখানে সময়ের গুরুত্ব বেশি, যেমন: চিকিৎসা সরঞ্জাম, শিল্প নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম ইত্যাদি।

বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  • নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে হয়।
  • সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া দ্রুত।
  • হার্ড রিয়েল-টাইম এবং সফট রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম দুটি ধরণের হতে পারে।

৫. এম্বেডেড অপারেটিং সিস্টেম (Embedded Operating System):

এম্বেডেড অপারেটিং সিস্টেম এমন একটি অপারেটিং সিস্টেম যা বিশেষ কোনো নির্দিষ্ট ডিভাইসের জন্য ডিজাইন করা হয়। এটি ছোট এবং দক্ষ হয় এবং সাধারণত হার্ডওয়্যারের সাথে যুক্ত থাকে, যেমন: মোবাইল ফোন, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি।

বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  • নির্দিষ্ট কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • সাধারণত ছোট এবং দ্রুত।
  • হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মধ্যে সরাসরি ইন্টারঅ্যাকশন করে।

এই সমস্ত অপারেটিং সিস্টেমের প্রয়োগ ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে করা হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুসারে এদের কার্যকারিতা ও গঠন আলাদা হয়ে থাকে।

 

অপারেটিং সিস্টেম (OS) কম্পোনেন্ট: কার্নেল, শেল এবং সিস্টেম কলস

১. কার্নেল (Kernel):

কার্নেল অপারেটিং সিস্টেমের মূল অংশ। এটি সরাসরি হার্ডওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যারের মধ্যে মধ্যস্থতা করে। কার্নেল কম্পিউটারের সমস্ত হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার রিসোর্সগুলির ব্যবস্থাপনা করে। এটি একাধিক কাজ সমান্তরালে চালানো, মেমোরি ম্যানেজমেন্ট, ফাইল সিস্টেম ব্যবস্থাপনা, এবং ডিভাইস ম্যানেজমেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি করে থাকে।

কার্নেলের প্রধান কাজগুলো:

  • প্রসেস ম্যানেজমেন্ট: একাধিক প্রসেসের মধ্যে সমন্বয় করা এবং তাদের কার্যক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করা।
  • মেমোরি ম্যানেজমেন্ট: মেমোরির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং আলোকিত করা, যাতে প্রসেসগুলি মেমোরি শেয়ার করতে পারে।
  • ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট: হার্ডওয়্যার ডিভাইসগুলির সাথে যোগাযোগ এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা।
  • ফাইল সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট: ফাইল সিস্টেমের ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবহারকারীকে ফাইল তৈরি, মুছে ফেলা ও এক্সেস করার সুযোগ দেওয়া।

২. শেল (Shell):

শেল হল কার্নেলের সাথে ব্যবহারকারীর যোগাযোগের ইন্টারফেস। এটি একটি প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারীর ইনপুট (কমান্ড) গ্রহণ করে এবং সেই কমান্ডগুলি কার্নেলের কাছে পাঠিয়ে তার ফলাফল প্রদর্শন করে। শেল সাধারণত দুটি প্রকারের হয়:

  • কমান্ড লাইন শেল: যেখানে ব্যবহারকারী সরাসরি টেক্সট আকারে কমান্ড ইনপুট করে। যেমন: Bash, Zsh ইত্যাদি।
  • গ্রাফিকাল শেল: যেখানে ব্যবহারকারী গ্রাফিকাল ইন্টারফেসের মাধ্যমে (মাউস ও কিবোর্ড) কাজ করে। যেমন: GNOME, KDE ইত্যাদি।

৩. সিস্টেম কলস (System Calls):

সিস্টেম কলস হল সেই মাধ্যম যার মাধ্যমে অ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যার কার্নেলের কাছে তার প্রয়োজনীয় কাজগুলি করায়। যখন কোনও প্রোগ্রাম হার্ডওয়্যার বা সিস্টেম রিসোর্স অ্যাক্সেস করতে চায়, তখন সেটি সরাসরি হার্ডওয়্যারের সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। সেক্ষেত্রে প্রোগ্রামটি সিস্টেম কল ব্যবহার করে, যা কার্নেলের মাধ্যমে সেই কাজগুলি সম্পন্ন করে।

সাধারণ সিস্টেম কলের উদাহরণ:

  • ফাইল ম্যানিপুলেশন: ফাইল খোলা, পড়া, লেখা এবং বন্ধ করার জন্য সিস্টেম কল ব্যবহার করা হয়।
  • প্রসেস ম্যানেজমেন্ট: প্রসেস তৈরি, বন্ধ বা প্রসেসের স্ট্যাটাস জানতে সিস্টেম কল ব্যবহৃত হয়।
  • মেমোরি ম্যানেজমেন্ট: মেমোরি অ্যাসাইন বা মুক্ত করতে সিস্টেম কল ব্যবহার করা হয়।
  • ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট: ইন্টারনাল বা এক্সটার্নাল ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে সিস্টেম কল ব্যবহৃত হয়।

সারসংক্ষেপ:

কার্নেল, শেল, এবং সিস্টেম কলস মিলে একটি অপারেটিং সিস্টেমের ভিত্তি গঠন করে। কার্নেল সরাসরি হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে, শেল ব্যবহারকারীর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে নির্দেশাবলী পাঠায় এবং সিস্টেম কলগুলি অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয় কাজগুলি সম্পন্ন করতে কার্নেলের সহায়তা নেয়।

 অপারেটিং সিস্টেমের বিবর্তন

অপারেটিং সিস্টেম (OS) হল এক ধরনের সফটওয়্যার যা কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এবং ব্যবহারকারীর মধ্যে মধ্যস্থতা করে। এর মূল কাজ হলো কম্পিউটার সিস্টেমের সমস্ত প্রক্রিয়া এবং সংস্থান নিয়ন্ত্রণ করা এবং বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামকে সঠিকভাবে চালাতে সহায়তা করা। অপারেটিং সিস্টেমের বিবর্তন বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, যা আমরা এখানে আলোচনা করবো।

১. শুরুতে (১৯৫০-এর দশক)

১৯৫০-এর দশকে অপারেটিং সিস্টেমের ধারণা আসলে তেমন বিকশিত হয়নি। সেই সময়ে কম্পিউটারগুলি প্রধানত হাতের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো, যেখানে প্রতিটি প্রোগ্রাম সরাসরি কম্পিউটারে ইনপুট দিতে হতো। এই সময়ে কম্পিউটারে প্রোগ্রাম চালানোর জন্য প্রত্যেকটি ধাপ ম্যানুয়ালি সম্পন্ন করা হতো, যেমন ইনপুট ডিভাইস সেট করা এবং আউটপুট পেতে অপেক্ষা করা। তখনো কোনো আধুনিক অপারেটিং সিস্টেম ছিল না।

২. ব্যাচ প্রসেসিং (১৯৬০-এর দশক)

১৯৬০-এর দশকে ব্যাচ প্রসেসিং নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়া আসে, যেখানে একাধিক কাজ একসাথে গুচ্ছ আকারে সম্পন্ন করা হতো। এই সময়ে, অপারেটিং সিস্টেম প্রাথমিক স্তরে ছিল এবং কাজের সময় পরিকল্পনা (scheduling), কাজের ধারাবাহিকতা (job sequencing) এবং ইনপুট/আউটপুট (I/O) পরিচালনা করত।

৩. টাইম-শেয়ারিং সিস্টেম (১৯৭০-এর দশক)

১৯৭০-এর দশকে টাইম-শেয়ারিং অপারেটিং সিস্টেমের উদ্ভব ঘটে, যা একাধিক ব্যবহারকারীকে একসাথে একটি কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ দেয়। এতে সিপিইউর সময় ভাগ করে বিভিন্ন প্রোগ্রামের মধ্যে সমানভাবে বিতরণ করা হয়, ফলে একাধিক ব্যবহারকারী একসঙ্গে তাদের কাজ করতে পারতেন।

৪. পারসোনাল কম্পিউটার এবং GUI (১৯৮০-এর দশক)

১৯৮০-এর দশকে পারসোনাল কম্পিউটার (PC) এবং গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI)-এর আবির্ভাব ঘটে। মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ এবং অ্যাপলের ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম এই যুগে প্রসার লাভ করে। GUI ব্যবহারকারীকে মাউসের মাধ্যমে কাজ করতে সাহায্য করে এবং কমান্ড লাইন ইন্টারফেসের তুলনায় অনেক সহজ এবং দ্রুত হয়।

৫. নেটওয়ার্কিং এবং মাল্টিটাস্কিং (১৯৯০-এর দশক)

১৯৯০-এর দশকে নেটওয়ার্কিং এবং মাল্টিটাস্কিং অপারেটিং সিস্টেমগুলি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৯৫, ৯৮ এবং ২০০০ এই সময়ে বাজারে আসে, যা মাল্টিটাস্কিং এবং নেটওয়ার্কিং ফিচার নিয়ে আসে। এর ফলে ব্যবহারকারীরা একাধিক প্রোগ্রাম একসঙ্গে চালাতে সক্ষম হয় এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে।

৬. মোবাইল এবং ক্লাউড কম্পিউটিং (২০০০-এর দশক থেকে বর্তমান)

২০০০-এর দশকের শুরু থেকে মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম যেমন অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই যুগে ক্লাউড কম্পিউটিং এবং ভার্চুয়ালাইজেশনেরও বিস্তার ঘটে। ক্লাউড ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমগুলি কম্পিউটারের স্থানীয় হার্ডওয়্যার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সমস্ত ডেটা এবং অ্যাপ্লিকেশন ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালনা করে।

অপারেটিং সিস্টেমের বিবর্তন প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে এবং প্রতিটি নতুন পর্যায়ে মানুষের জীবনকে আরও সহজ এবং কার্যকর করেছে। বর্তমান সময়ে অপারেটিং সিস্টেমগুলি শুধুমাত্র কম্পিউটারেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসেও ব্যবহার করা হচ্ছে।



                                  





Comments